মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

বাঁশখালীর কুম্ভমেলা মাতাবেন জি বাংলার অদিতি মুন্সি


 নিজস্ব প্রতিবেদকঃ৭ই জানুয়ারি  কুম্ভমেলায় গান পরিবেশন    করবেন কলকাতার জনপ্রিয় শিল্পী অদিতি  মুন্সি।পাড়ের পাদদেশে মন্দির। নাম ঋষিধাম। সুদৃশ্য বিশাল ফটক দিয়ে শত শত মানুষের আসা-যাওয়া চলছে। মন্দিরে চলছে পূজা-অর্চনা। মন্দিরের কিছু দূরে মঞ্চে একজন যোগবিদ শিশুদের যোগাসন শিক্ষা দিচ্ছেন। যোগাসনের মাধ্যমে রোগমুক্তির এই শিক্ষা দেখতে মঞ্চের সামনে ভিড় করেছেন শত শত নর-নারী। মন্দিরে ঢোকার মুখে পাশের মাঠে বসেছে মেলা। নাগরদোলায় দুলছে শিশুরা। মাঠের পাশে দুপুরের প্রসাদ আস্বাদনে ব্যস্ত ভক্তরা।
ওপরের বর্ণনা চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কালীপুর ইউনিয়নের কোকদণ্ডী গ্রামের ঋষিধামের ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলার। গত রোববার শুরু হয়েছে আট দিনব্যাপী ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলা। মেলা উপলক্ষে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্ত ও সন্ন্যাসীরা ভিড় করেছেন। কুম্ভমেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের গ্রামেও উৎসবের আবহ তৈরি হয়েছে।
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী ভারতের চারটি স্থানে কুম্ভমেলা হয়। এগুলো হলো হরিদ্বার, প্রয়াগ, নাসিক ও উজ্জয়িনী। তিন বছর পর চক্রাকারে চারটি স্থানে কুম্ভমেলা বসে। সে হিসাবে একেকটি স্থানে ১২ বছর পরপর এই মেলা ঘুরে আসে। বাংলাদেশে একমাত্র ঋষিধামেই তিন বছর পরপর এই মেলার আয়োজন হয়।

কুম্ভমেলা ঘিরে শিশুদের যোগাসনের অনুশীলন। ছবিটি গতকাল সকালে তোলা l প্রথম আলো
শ্রীগুরু সংঘ, ঋষিধাম ও তুলসীধাম পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ বলেন, কুম্ভ মানে কলস। অমৃতের কলস। অমরত্ব লাভের আশায় একবার দেবতাদের সঙ্গে অসুরকুলের সমুদ্রমন্থন হয়েছিল। সমুদ্রমন্থনের ফলে উঠে এল বহু মূল্যবান সামগ্রী। উঠল একটি অমৃতের ভাণ্ড। অসুরদের এই অমৃতকুম্ভ না দেওয়ার জন্য দেবরাজ ইন্দ্রপুত্র জয়ন্ত একসময় সেটি নিয়ে পালালেন। পালানোর সময় অমৃত ভাণ্ড রাখা হয়েছিল চারটি স্থানে—হরিদ্বার, প্রয়াগ, ত্রিম্বকেশ্বর-নাসিক ও উজ্জয়িনীতে। এই চারটি স্থানে কলস থেকে কয়েক ফোঁটা অমৃত রস পড়েছিল বলে ধারণা। তাই এই চারটি স্থানে অমৃত সুধারস আস্বাদনের জন্য বসে কুম্ভমেলা। এগুলো তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত।
তুলসীধাম পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক বিমল কান্তি দেব বলেন, যাঁরা দূরদূরান্ত থেকে ভারতের এই চারটি স্থানে গিয়ে তীর্থ করতে অক্ষম, তাঁদের কথা বিবেচনা করে বাঁশখালী ঋষিধামের প্রতিষ্ঠাতা মোহন্ত শ্রীমৎ অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ ১৯৫৭ সাল থেকে এখানে কুম্ভমেলার প্রবর্তন করেছিলেন। ভারতের চারটি স্থানের যেকোনো একটি মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার এক বছর পর বাংলা মাঘ মাসের ত্রয়োদশী তিথিতে ঋষিধামে কুম্ভমেলা বসে।
ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলা উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক দেবাশীষ পালিত বলেন, প্রতিবারই ভারতসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক সন্ন্যাসী আসেন। এটি এক মহা মিলনমেলা। মেলা উপলক্ষে দূরদূরান্ত থেকে ইতিমধ্যে অন্তত ৫০ জন সন্ন্যাসী এসেছেন।
ভারত থেকে আসা শ্রীমৎ বিশ্বেশ্বরানন্দ গিরি মহারাজ বলেন, ‘আমি ভারতের বিভিন্ন কুম্ভমেলায় গিয়েছি। এখানেও এসেছিলাম আগে। এবার আবার এলাম। এখানে এলে মন ভালো হয়।’
মেলা উপলক্ষে প্রতিদিনই চলছে নানা অনুষ্ঠান। গতকাল দ্বিতীয় দিনে ঋষি ধ্বজা উত্তোলন, বেদমন্ত্র পাঠ, মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বালন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিদিনই ধর্মীয় আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনে সমৃদ্ধ এই মেলা। আজ মঙ্গলবার মেলা উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করবেন জি বাংলার সারেগামাপা খ্যাত শিল্পী অদিতি মুন্সী।
মেলায় বাঁশ-বেতের জিনিসপত্র, দা-বঁটি, হাতপাখা, শিশুদের খেলনাসহ নানা পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। কুমিল্লা থেকে চশমা, ঘড়িসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে মেলায় আসেন দোকানি মোরশেদ।
গতকাল দুপুরে মেলায় ঘুরতে আসেন বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী শারমিন ও তাঁর বন্ধুরা। শারমিন বলেন, মেলায় এলে কার না ভালো লাগে।


 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৪র্থ আদালতের কার্যালয়, চট্টগ্রাম, বিভাগীয় বিশেষ জজ।নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় অনিয়ম!

 অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৪র্থ আদালতের কার্যালয়, চট্টগ্রাম,   বিভাগীয় বিশেষ জজ, আদালত, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে সরকারি বিধি অ...