বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০১৭

শিশুর মানসিক বিকাশ ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ


শিশুর মানসিক বিকাশ ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ।


বি.কে  বিচিত্র।
অমিত সম্ভাবনার আলো নিয়ে পৃথিবীতে আসে একটি শিশু। এ সম্ভাবনার বিকাশ কতটুকু ঘটবে তা নির্ভর করে তাকে কীভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। শিশুর পরিবার, পিতা-মাতা এবং পারিপার্শ্বিক আবহের ওপরেই নির্ভর করে তার বিকাশ। শারীরিক, মানসিক, আত্মিক, নৈতিক এবং মননে সমৃদ্ধ নাগরিকই আমাদের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম।
শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ একে অপরের পরিপূরক হলেও আমরা এতদিন শিশুর শারীরিক বিকাশকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছি। শারীরিক ও মানসিক বিকাশ দুটি ভিন্ন প্রক্রিয়া। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ছাড়া শিশু তথা মানুষের পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব নয়। সমপ্র্রতি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরের যে অঙ্গ মানসিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে, সেই অঙ্গ অর্থাত্ মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ও বিকাশ সবচেয়ে দ্রুত হয় মাতৃগর্ভে, যা প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ। এ দেশে পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের ১৮.৩৫ শতাংশ মানসিক রোগে আক্রান্ত।
জন্মলগ্নেই শিশুর মস্তিষ্কে কোটি কোটি কোষ বিদ্যমান থাকে। শিশুর পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে মস্তিষ্কের ৮০-৯০ শতাংশ কোষের সংযোগ ঘটে। তবে এর বেশিরভাগ সংযোগই ঘটে প্রথম তিন বছর বয়সের মধ্যে। শিশুর সঙ্গে ভাববিনিময় ও পারস্পরিক ক্রিয়াদি যত বেশি হয়, শিশুর শিখন ও মস্তিষ্কের বিকাশ তত দ্রুত হয়। এর জন্য শিশুর সুস্থ ও সঠিক মানসিক বিকাশের সঙ্গে শিশুর পারিপার্শ্বিক আবহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর পারিবারিক আবহ, সামাজিক আবহ, সর্বোপরি পরিবেশগত আবহ অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট প্রভাব রাখে শিশুর মানসিক বিকাশের পর্যায়ে। জন্মের পর থেকেই শিশু শিখতে শুরু করে। প্রতিটি মুহূর্ত তার শেখার সময়, প্রতিটি ক্ষেত্রই তার পাঠশালা। তাই, এ সময় শিশুর যত্নে পূর্ণ মনোযোগ দেয়া দরকার। শিশুকে প্রতি মুহূর্তে দিতে হবে মধুর অভিজ্ঞতা, সুন্দর সাজানো সময়। ছোট শিশুদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন কাজ হচ্ছে কথা বলতে শেখা ও ভাষা বোঝা। শিশুকে গান শুনিয়ে, কথা বলে, ছড়া শুনিয়ে যা বলা হয়, তার মাধ্যমে শিশু সবচেয়ে ভালো শেখে। মনে রাখা দরকার, কথা বলতে পারার অনেক আগেই শিশু ভাষা বোঝার ক্ষমতা অর্জন করে। তাই শিশুকে অনবরত ধ্বনি, শব্দ, কথা, গান, ছবি দেখিয়ে ও অঙ্গভঙ্গি দিয়ে ভাবিয়ে রাখুন। ফলে শিশু শুনে, অনুকরণ করে এবং ধীরে ধীরে তার নিজস্ব ধ্বনিগুলোকে বোঝার মতো শব্দে পরিণত করে কথা বলতে শিখবে।
শিশুকে প্রচুর খেলাধুলার সুযোগ দিতে হবে। খেলার মাধ্যমে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বাড়ে। শিশুদের আচার-আচরণ ও ব্যক্তিত্ব বিকাশে বড়দের প্রভাব অত্যন্ত বেশি। বড়রা যদি শিশুদের প্রতি দয়া, সুবিবেচনা ও ভাব দেখায় তবে শিশুরাও এসব দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবে। এতে তার মানসিকতা ইতিবাচক দিকে প্রবাহিত হতে থাকবে। তবে এর বিপরীত আচরণের ক্ষেত্রে শিশুরা ক্রোধ, অন্যের কথা না মানা, সহিংস আচরণ রপ্ত করতে থাকবে। শিশুর আবেগ অনুভূতি বা আচরণ অনেক সময় বড়দের কাছে অযৌক্তিক বা বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে, কিন্তু শিশুর জন্য এটা স্বাভাবিক ও বাস্তব। তাই এ ব্যাপারে পিতামাতা ও বড়দের যথেষ্ট সহানুভূতিশীল হতে হবে।
শিশু নতুন কিছু শিখলে, তা যতই সামান্য হোক, তার সামনে সম্মতি, উত্সাহ ও আনন্দ প্রকাশ করা উচিত। সুস্বাস্থ্য, সুশিক্ষা, নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও ভালোবাসার দাবি পূরণ করে প্রতিটি শিশুকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিকশিত করে তোলা সম্ভব। প্রত্যেক পিতামাতাই তার শিশুকে হাসি-খুশি, স্বাস্থ্যবান, বুদ্ধিদীপ্ত ও পূর্ণ বিকাশমান দেখতে চায়। আমরা যদি প্রতিটি শিশুকে একইরূপে দেখার চেষ্টা করি এবং সেভাবে গড়ে তুলতে আন্তরিক হই তবেই ভবিষ্যতে একটি সুন্দর সমৃদ্ধ রাষ্ট্র ও জাতি পাব।
 লেখক : বি.কে  বিচিত্র,  বিএসএস (অনার্স),  এমএসএস,  রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জাবি।
bichitronu@gmail.com

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৪র্থ আদালতের কার্যালয়, চট্টগ্রাম, বিভাগীয় বিশেষ জজ।নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় অনিয়ম!

 অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৪র্থ আদালতের কার্যালয়, চট্টগ্রাম,   বিভাগীয় বিশেষ জজ, আদালত, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে সরকারি বিধি অ...