সোমবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৭

একজন ম্যাজিস্ট্রেটের আকুতি , একটি মানবিক আবেদন

Posted by B.K
নিউজ ডেক্স::"ব্রেইনে এতো অল্প সময়ের ব্যবধানে আরেকটা অপারেশন! নানা আশংকায় হাত-পা জমে যাচ্ছে, মুখে কথা সরছে না। একদিকে রশিদ সাহেবের জীবনের ঝুঁকি, অন্যদিকে এতো টাকার সংকুলান! আমি চোখে অন্ধকার দেখছি। শোনার পর থেকে কেঁদে চলেছে আমার মেয়েটা। মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন। জানি না, আমার অবুঝ সন্তানদের জন্যে সামনে কী দিন অপেক্ষা করছে?"
ফেসবুক দেওয়ালে সাঁটা জীবন-সাহিত্যের এই অন্তর্বেদনা চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জান্নাতুল ফেরদৌস আলেয়া'র। প্রিয়তম স্বামী অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আব্দুর রশীদ ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত। আলেয়া মৃত্যুপথযাত্রী স্বামীকে নিয়ে সিংগাপুরে অপেক্ষায় আছেন আরেকটি সফল অপারেশনের। একটি অপারেশন হয়েছিল এ বছরের জুন মাসেই, সিংগাপুরে। সে দফায় সফল অপারেশনই ছিল ওটা। কিন্তু ডাক্তারদের আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণ করে সেখানে আগের চেয়ে বড়ো আরেকটি টিউমার দানা বেধেছে এর মধ্যেই। শীঘ্রই আরেকটি অপারেশন করতে হবে। ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশনে আলেয়া আবারো স্বামীকে নিয়ে সিংগাপুর গেছেন এ মাসের ১২ই ডিসেম্বর। অদ্যাবধি অবস্থান করছেন সেখানেই, আর দিন গুণছেন চিকিৎসাশাস্ত্রের আরেকটি সফল অপারেশনের।
কিন্তু বাধ সেধেছে অর্থ। সাকুল্যে প্রয়োজন পঞ্চাশ লাখ টাকার। সংগ্রহে আছে মাত্র দশ লাখ টাকার মতো। লাগবে আরও প্রায় চল্লিশ লাখ টাকা। অপারেশনের উদ্দেশ্যে হাসপাতালে এডমিশন নিতে সর্বমোট অর্থের যে আশিভাগের আবশ্যক হয়, তাও যোগাড় হয়নি এখনো। নিরূপায় বিচারক-দম্পতি প্রথমবার অপারেশনের সময় একবার হাত পেতেছিলেন বলে লাজে-সংকোচে আর বলছেন না কিছুই। বিচারক তবে স্বভাবে কবি অভিমানিনী আলেয়া মৃত্যুপথযাত্রী স্বামীর শিয়রে বসে না-বলা কথাগুলোকে গদ্য-পদ্যের মালায় গেঁথে সন্তাপে ফেসবুকের দেওয়ালে সেঁটে দিচ্ছেন অসহায় জীবন-সাহিত্যের একের পর এক শোকগাথা বা elegy; আর অসহায়ত্বকে সমর্পণ করেছেন বিধাতার কাছে।  'প্রশ্নের ভীড়' শিরোনামে ১৭ই ডিসেম্বরের এক পদ্যে নিরূপায় আলেয়া এভাবেই সকল অভাব ঘুচানোর ভার সপেছেন বিধাতার দরবারে-
"প্রশ্নের পর প্রশ্ন আসে
জানিনে তার জবাব
জানি, শুধু তুমি চাইলেই ঘুচতে পারে
আমার সকল অভাব।"
নিয়তির অমোঘ বিধান মানছে আলেয়া, মানছি আমরাও। না মানার কোনো অবকাশও যে নেই! বিধাতা সকলেরই ভাগ্যলিপি নির্ণয় করে রেখেছেন। কিন্তু বিধাতা তো সে-লিপিতে থাকা কারো মৃত্যুক্ষণ তাঁর কোনো দেবদূতের কাছে আগে থেকে প্রকাশ করে রাখেননি। মৃত্যুক্ষণ-সংক্রান্ত এই কঠোর গোপনীয়তা-বিষয়ক বিধাতার একচ্ছত্র মহিমার কথা তো আমরা সবাই জানি। তাই বলে বিধাতার এই গুপ্ত নির্ণয়ের উপর ভর করে উদ্যোগ বা প্রচেষ্টাকে পুরোপুরি নির্বাসনে পাঠিয়ে কুঁড়েমিতে জপমালা জপার অবকাশ আছে কি? বিধাতা ভাগ্যলিপিতে যা নির্ণয় করে রেখেছেন, রাখুক না! আমরা নয় দিনশেষে ভগ্নচিত্তে বিধাতার সাথে অভিমান-ই করবো! তবে বিধাতার সাথে অভিমান করতেও যে উদ্যোগ বা প্রচেষ্টার নিতান্ত আবশ্যক হয়!
চলুন না আবার একটা উদ্যোগ নিই, নেমে পড়ি আরেকবার। বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস বা বাংলাদেশ আইন সমিতি [ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের (এই দম্পতিসহ) সংগঠন] কিংবা ব্যক্তিবিশেষের সমষ্টিগত উদ্যোগ আর সহৃদয়বানদের স্বতন্ত্র অংশগ্রহণ কি পারবে না এই কয়েক লক্ষ টাকার বন্দোবস্ত করতে? আমরা কি পারি না নিরূপায় রশিদ-আলেয়া দম্পতির সাঁঝের বাতিতে প্রত্যুষের দীপ্যমান আলো জ্বালাতে? আমরা কি পারি না এই দম্পতির শিশুকন্যা রাইসা'র অঝোর কান্না কিঞ্চিৎ প্রশমিত করতে? ভূপেন হাজারিকার কালজয়ী গানের "মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে" পঙক্তিগুলো কি যুগেযুগে কেবল সুরের ক্ষুধাই মেটাবে, শ্রোতার  মানবতাবোধের উন্মেষ ঘটাবে না? 
হাঁ, জগতে বারংবার মানবতাবোধের উন্মেষ ঘটছে বলেই টিকে আছে এ জগৎসংসার। নিশ্চয়ই আমরাও পারি আমাদের পরিমণ্ডলে এ বোধের সঞ্চার ঘটাতে আবার। সে প্রতীতি এবং সামর্থ্য আমাদের আছে। একটা সমবেত ও প্রত্যয়ী উদ্যোগের কাছে এই চল্লিশ লক্ষ টাকা অধরা কোনো অংক হতে পারে না। প্রয়োজন কেবল সে-রকম একটা উদ্যোগ আর আন্তরিক অংশগ্রহণের। আর তাতে অন্তত বিনা-চিকিৎসায় অসহায়-অনুভবে মৃত্যুর ক্ষণ গুণবেন না বিচারক আব্দুর রশিদ; শিয়রে শমনে বসে সৃষ্টির কবিতার বদলে কেবল সৃষ্টিনাশা শোকগাথা রচিবেন না পত্নী আলেয়া; অঝোরে কেঁদে বুক ভাসাবে না এই বিচারক-দম্পতির দীপ্তিমতী কন্যা রাইসা; পিতৃবিয়োগের তেতো স্মৃতি আজনম তাড়িয়ে বেড়াবে না অবুঝ শিশুপুত্র মনন মাহাথির-এর অস্পষ্ট স্মৃতিপটকে। এই হতভাগ্য পরিবারের ভাগ্যের অন্তিম লিপিটা নয় জগদ্বিধাতার বিধানেই হোক!
 
সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা- জান্নাতুল ফেরদৌস, অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ-১, চট্টগ্রাম, সঞ্চয়ী হিসাব নং- ১০০৭০০২১৩০৭০৭, সোনালী ব্যাংক, কোর্টহিল শাখা, চট্টগ্রাম।
বিকাশ নাম্বার: ০১৯১২ ৪২৪৭০৫ (ব্যক্তিগত)।
সূত্র- ক্যাশব রায়'র ফেসবুক ওয়াল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৪র্থ আদালতের কার্যালয়, চট্টগ্রাম, বিভাগীয় বিশেষ জজ।নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় অনিয়ম!

 অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৪র্থ আদালতের কার্যালয়, চট্টগ্রাম,   বিভাগীয় বিশেষ জজ, আদালত, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে সরকারি বিধি অ...