আজ কিছুদিন ধরে লাগাতার জাতীয় দৈনিকে বিসিএস উন্মাদনার কিছু চিত্র তুলে ধরছি,
*স্ত্রীর অনুপ্রেরণায় ৩৮তম বিসিএসে প্রথম হয়েছেন রুহুল
*ফেরিওয়ালার মেয়ে বিসিএস ক্যাডার, বই কিনতে না পারা মেয়ে হলেন এসপি।
*বিদেশে সংসার সামলে বিসিএস ক্যাডার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী
*
বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও ভর্তি হতে না পারা ছেলেটি এখন বিসিএস ক্যাডার
*৩৮তম বিসিএস: স্বামী শিক্ষা ক্যাডারে ইতিহাসে প্রথম, স্ত্রী অষ্টম
*কখনো কোচিং করেননি বিসিএস প্রশাসনে প্রথম রুহুল
*হতে চাইলাম শিক্ষক, বানাইলেন ম্যাজিস্ট্রেট
*প্রাথমিকের শিক্ষিকার ছেলে এখন বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডার
*জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পঞ্চমবারের চেষ্টায় বিসিএসে সফল হলেন তৃপ্তি
‘আয়া’ মায়ের ‘হার না মানা’ জীবনযুদ্ধে ছেলে বিসিএস
*দুই বোন একসঙ্গে প্রশাসনে বিসিএস ক্যাডার
গত কয়েকদিনে দেশের সমস্ত প্রধান জাতীয় দৈনিকের আলোচিত সংবাদ বিসিএস সম্পর্কিত সংবাদগুলো পড়লে মনে হবে বিসিএস আলাদিনের চেরাগ। এই মহাবিশ্বে বিসিএসের চেয়ে উত্তম কিছু নেই। ট্র্যাম্পের নির্বাচনী প্রচারনা থেকে শুরু করে, ভারত চায়না সীমানা দ্বন্দ্ব সব হচ্ছে বিসিএস ক্যাডারের পদ নিয়ে।
ধীর ধীরে অবস্থা এমন দাঁড়াচ্ছে বিসিএস নাম নেয়ার আগে কবে যেন ওজু করবার নোটিশ জারি হয়, নামের আগে বলতে হবে মহান বিসিএস।
পঙ্গপালের মতো সবাই ছুটছি বিসিএসে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ হতে প্রস্তুতি চলে বিসিএসের।
কোথাও গবেষণা নেই, উদ্ভাবনী নেই, ব্যবসার বিকাশ নেই, উদ্যোক্তা নেই।
ইউজিসির এক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, দেশের ৬৫ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা হয় না। গবেষণার বদলে চলে মুখস্থনির্ভর চাকরিকেন্দ্রিক পড়ালেখা!
৪১তম বিসিএসে আবেদনকারী ৪ লাখ ৭৫ হাজার
সবাই ক্যাডার হতে চায়, অথচ উদ্ভাবন ছাড়া, গবেষণা ছাড়া, উদ্যোক্তা ছাড়া, বেসরকারি উদ্যোগ ছাড়া, ব্যবসা ছাড়া দেশটা মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য।
দেশের চাকা চালাতে প্রতিটি পেশায় মেধাবীদের প্রয়োজন, যোগ্যদের প্রয়জন।
পঙ্গপালের মতো মেধাবীরা বিসিএসের পিছনে ছুটলে অযোগ্য ব্যাক্তিরা অতি সহজে নির্বিঘ্নে প্রয়োজনীয় পেশাগুলোর মার্কেট দখল করে ফেলবে।
এর পরিনাম হবে ভয়াবহ।
ভুল চিকিৎসায় বিসিএস ক্যডারের স্ত্রীর জীবন বিপন্ন হবে, বিসিএস ক্যাডারের সন্তানের শিক্ষার জন্য মেধাবী শিক্ষকের প্রয়োজন। শিক্ষক ভালো না হলে বিসিএস ক্যাডারের সন্তান তো পরবর্তীতে বিসিএস ক্যাডার হতে পারবেন না!
নষ্ট ব্যাক্তি ব্যাংক দখল করলে চাকুরী শেষে একজন বিসিএস ক্যাডারের সারা জীবনের সঞ্চয় লাপাত্তা হয়ে যাবে।
ব্যবসায় দুষ্ট লোকের আগমন হলে আমাদের সন্তান বিষাক্ত খাবার খেয়ে বড় হবার বদলে বনসাই হয়ে বেড়ে উঠবে।
বিসিএসের বিরোধী আমি নই, প্রচণ্ড পরিশ্রমী এই লম্বা পরীক্ষা মাধ্যমে যারা পাশ করছেন তাদের আমি সম্মান রেখেই বলছি, আমাদের এক্ষুনি আমাদের চাকুরী কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন করার সময় চলে এসেছে।
কেন এই উন্মাদনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, বুয়েট সবাই ছুটছে বিসিএসের পিছনে!
প্রধান কারন, নিরাপদ চাকুরী, বেতন ভালো, পাওয়ার!
এই যদি কারন হয় তবে এরচেয়ে ভয়াবহ দুঃসংবাদ এই দেশের জন্য আর হতে পারে না।
যে ছেলে আজ একটি ক্ষুদ্র ব্যবসা করতে চাইছে সে কেন নিজেকে অনিরাপদ মনে করছে, তার উত্তর জানা দরকারি।
প্রাইভেট জবে নিরাপত্তা কেন দিতে পারছে না, আজকে এই প্রশ্ন করতে হবে উচ্চকণ্ঠে।
দেশে কেন গবেষক তৈরি হয় না, আমাদের উদ্যোক্তারা কোথায়, তারা কি কি বাঁধার সম্মুখীন হয়, একজন উদ্যোক্তা একশো জনের চাকুরীর সুযোগ তৈরি করতে পারে অথচ আমাদের দেশে উদ্যোক্তাদের অবহেলা অপমান কেন, বারবার করে এর সমাধান বের করে নিয়ে আসতে হবে।
দেশকে বাঁচাতে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া অতি জরুরী।
কেবল বিসিএসের পিছনে যদি আমাদের সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থা ছুটে তবে চাঁদের বুকে কোন বাংলাদেশী কোনদিন পা রাখার কল্পনাও করতে পারবে না।
গবেষণা, উদ্ভাবন, উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা ছাড়া বিদেশে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূতদের নিয়েই সারাজীবন অহংকার করে যেতে হবে, টিকটক ভিডিও বানিয়ে যেতে হবে, একটা টিকটক অ্যাপ্লিকেশন বানানোর মতো ফান্ডিং, সাপোর্ট জোগাড় হবে না।
পাশের দেশের ছোট বাচ্চারা স্কুলেই যখন মহাশূন্যের বুকে হেঁটে বেড়াবার স্বপ্ন দেখবে আমাদের সন্তানরা তখন পত্রিকা পড়ে ভাববে - রুহুল ভাই আসলেই বস, বিসিএসে চান্স পাইছে। রুহুল ভাইয়ের ভালো বিয়া হবে!
#বিসিএস_বিরোধী_নই_সকল_পেশার_গুরুত্ব_অনুধাবন_করুন
©রাফিউজ্জামান সিফাত